প্রিয় শিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা বিনিময় করে নিচের গানটি অথবা খ্রীষ্টসংগীত, ধর্মগীত থেকে সমতুল্য একটি গান দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবেন। তুমি গানটি Youtube অথবা তোমার মা-বাব্য/অভিভাবকের কাছ থেকে শিখে নিতে পারো।
প্রণাম করি মিষ্ট যীশু, আসি তোমার দুয়ারে
আমার হৃদয়, বাক্য চিন্তা, কার্য সঁপি তোমারে।।
১. তোমার প্রেমের চিন্তা আমি মনে রাখব সতত
অপর কোন চিন্তার মাঝে যেন না হই বিব্রত।।
২. আমি তুলব চক্ষু তোমায় দেখতে উর্ধ্বে আগারে
আমার হৃদে প্রতি স্পন্দন প্রীতি দিবে তোমারে।।
৩. আমি শুনব নিত্য নিত্য তোমার বাক্য সমুদয়
পালন করব তোমার ইচ্ছা প্রীতিযুক্ত বাধ্যতায়।।
৪. অবশেষে আসবে সন্ধ্যা দিনমান শেষ হয়ে
প্রণাম করব এসে তখন সেবার আনন্দ লয়ে।।
৫. আশীর্বাদ দেও, যীশু মোরে তবে আমি কাজে যাই
তোমার সঙ্গে রয়ে আবার তোমার সাক্ষাৎ পাই।।
গীতাবলী ৫০৩
পরিবারের সদস্যদের প্রতি তোমার দায়িত্ব এবং তোমার প্রতি পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব কী তা বিভিন্নভাবে জেনেছ। এ সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলে কী লেখা আছে তা দেখি।
পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ
শিক্ষক তোমাদের মধ্য থেকে ২/৩ জন শিক্ষার্থীকে ইফিষীয় ৫:২২, ২৩, ২৫, ৩১-৩৩ পাঠ করতে বলবেন। তুমি আগে থেকে পড়ে প্রস্তুত থেকো। তুমিও পড়ার সুযোগ পেতে পারো। ভক্তি সহকারে শুদ্ধ উচ্চারণে বাইবেলের অংশটুকু পাঠ করবে। কোথাও ভুল হলে তিনি সংশোধন করে দিবেন।
তোমরা যারা স্ত্রী, প্রভুর প্রতি বাধ্যতার চিহ্ন হিসাবে তোমরা নিজের নিজের স্বামীর অধীনতা মেনে নাও, কারণ খ্রীষ্ট যেমন মণ্ডলীর, অর্থাৎ তাঁর দেহের মাথা, স্বামীও তেমনি স্ত্রীর মাথা। তাছাড়া খ্রীষ্টই এই দেহের উদ্ধারকর্তা। তোমরা যারা স্বামী, খ্রীষ্ট যেমন মন্ডলীকে ভালবেসেছিলেন এবং তাঁর জন্য নিজেকে দান করেছিলেন ঠিক তেমনি তোমরাও প্রত্যেকে স্ত্রীকে ভালবেসো।
পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, "এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে আর তারা দু'জন একদেহ হবে।" এটা একটা মহান গুপ্ত সত্য- কিন্তু আসলে আমি খ্রীষ্ট এবং তাঁর মণ্ডলীর কথা বলছি। কিন্তু যাক সেই সব কথা। তোমরা প্রত্যেকে নিজের স্ত্রীকে নিজের মত ভালবেসো, আর স্ত্রীরও উচিত যেন সে নিজের স্বামীকে সম্মান করে।
সহজ করে বলছি
এই পদগুলোতে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে মন্ডলীর তুলনা করা হয়েছে। স্ত্রী যেমন স্বামীর প্রতি বাধ্য ও নম্র, যীশু ও মন্ডলীর প্রতি আমাদের তেমনি নম্র থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যীশুখ্রীষ্ট যেমন মন্ডলীর জন্য জীবন উৎসর্গ করে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন, স্বামীর উচিত স্ত্রীকে তেমনি ভালোবাসা এবং নিজের জীবন স্ত্রীর জন্য দান করা।
পবিত্র বাইবেলে স্বামী-স্ত্রীকে একত্রে থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নতুন পরিবার গঠন করার জন্য তারা একত্রে থাকবেন। নতুন পরিবার গঠন করার জন্য মা-বাবা তাদের সাহায্য করবেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন সত্য। সাধু পৌল স্বামী-স্ত্রীর এই সম্পর্কের সঙ্গে যীশু ও মণ্ডলীর তুলনা করেছেন। যীশু যেমন মন্ডলীকে ভালোবেসেছেন, স্বামীরও উচিত স্ত্রীকে তেমনি ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রী অবশ্যই একে অপরকে সম্মান করবে।
ইফিষীয় ৬:১-৩; হিতোপদেশ ১:৮-৯, ২২:৬,১৫: ২৩:২২-২৫; ২৯:১৭ এবং লেবীয় ১৯:৩২ পদে মা, বাবা ও সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা দেখি-
ছেলেমেয়েরা, প্রভু যেভাবে চান সেইভাবেই তোমরা মা-বাবার বাধ্য হয়ে চল, কারণ সেটাই হওয়া উচিত। পবিত্র শাস্ত্রে প্রথম যে আদেশের সংগে প্রতিজ্ঞা রয়েছে তা এই "তোমার মা-বাবাকে সম্মান কর, যেন তোমার মঙ্গল হয় এবং তুমি অনেক দিন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পার।"
ছেলে আমার, তুমি তোমার বাবার উপদেশে কান দাও; তোমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা ত্যাগ কোরো না। সেগুলো হবে তোমার মাথায় জড়াবার সুন্দর মালা আর গলার হারের মত।
ছেলে বা মেয়ের প্রয়োজন অনুসারে তাকে শিক্ষা দাও, সে বুড়ো হয়ে গেলেও তা থেকে সরে যাবে না। ছেলে বা মেয়ের অন্তরে বোকামি যেন বাঁধা থাকে, কিন্তু শাসনের লাঠি তা তার কাছে থেকে দূর করে দেয়।
তোমার বাবার কথা শোন যিনি তোমাকে জন্ম দিয়েছেন; তোমার মা বুড়ী হয়ে গেলে তাকে তুচ্ছ কোরো না। যে কোন মূল্যেই হোক না কেন সত্য, জ্ঞান, শিক্ষা এবং বিচারবুদ্ধি লাভ কর; কোন কিছুর বদলে তা অন্যকে দিয়ো না। ঈশ্বরভক্ত লোকের বাবা মহা আনন্দ লাভ করেন; জ্ঞানী ছেলের বাবা তাঁর ছেলের দ্বারা সুখী হন। তোমার মা-বাবা যেন সুখী হন; যিনি তোমাকে প্রসব করেছেন তিনি যেন আনন্দিতা হন।
তোমার ছেলেকে শাসন কর, তাতে সে তোমাকে শান্তিতে রাখবে আর তোমার প্রাণে আনন্দ দেবে।
"যারা বৃদ্ধ তারা কাছে আসলে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের সম্মান করতে হবে। তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে। আমি সদাপ্রভু।"
সহজ করে বলছি
পবিত্র বাইবেলে ঈশ্বরের প্রত্যাশা অনুসারে সন্তানদের মা-বাবার বাধ্য হয়ে চলতে বলা হয়েছে। এখানে মা- বাবাকে সম্মান করতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মা-বাবাকে সম্মান করলে সন্তানেরা আশীর্বাদ পাবে এবং তারা দীর্ঘজীবী হবে। তাদের উপদেশ ও শিক্ষা সন্তানের মাথার মুকুট ও গলায় হারের মতো। মাথার মুকুট ও গলায় হার যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি মা-বাবার উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করলে সন্তানদের সুন্দর দিকগুলোও মানুষ দেখতে পায়।
সন্তানদের যেভাবে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন সেভাবে শিক্ষা দিলে তারা বৃদ্ধ হলেও ভুলে যাবে না। তারা না বুঝে অনেক ভুল করে কিন্তু মা-বাবার ভালোবাসাপূর্ণ শাসনের ফলে তা শুধরে নেয়। সন্তানদের মা-বাবার কথা শোনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মা-বাবা বৃদ্ধ হলে তাদের অবহেলা করা যাবে না। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা, বুদ্ধি ও জ্ঞান লাভ করতে হবে। মা-বাবার পাশাপাশি সকল বৃদ্ধ ব্যক্তিকে যথাযথ সম্মান জানাতে হবে। ঈশ্বরভক্ত ও জ্ঞানী সন্তানদের দেখে মা-বাবা খুশি হন।
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা পূর্ববর্তী সেশনে তোমাদের পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের দায়িত্বের ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করেছ, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেও পারস্পরিক দায়িত্ব সম্বন্ধে জেনেছ। এখন পবিত্র বাইবেলের শিক্ষার আলোকে পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব সম্বন্ধে যে দিক-নির্দেশনা রয়েছে তা কতটুকু অনুসরণ করা হচ্ছে বিশ্লেষণ করে প্রত্যেকে লিপিবদ্ধ করো।
শিক্ষার্থীদের কাজ সম্পন্ন হলে কয়েকজনকে প্রশ্ন করে তাদের উত্তরগুলো জেনে নিন। অন্য শিক্ষার্থীরা কোনো নতুন তথ্য পেলে তা নোট করবে।
পরবর্তী সেশনে শিক্ষক তোমাদের বাইবেলের শিক্ষার আলোকে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠান করতে দিবেন। বিতর্কের বিষয়- 'পরিবারের সকল সদস্যের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ।'
শিক্ষক তোমাদের দুটি দলে ভাগ করে দিবেন। একটি পক্ষ দল, অন্যটি বিপক্ষ দল। তোমাদের নির্ধারিত বিষয়টি দলে আলোচনা করে যুক্তি/পয়েন্ট ঠিক করতে হবে। শিক্ষক একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তোমাদের মধ্য থেকে তিনজন বক্তা নির্বাচন করবেন। তিনজনের মধ্যে একজন হবে দলনেতা। বিতর্কের জন্য তোমরা বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে আসবে।
শিক্ষককে ধন্যবাদ জানাও।